প্রথম সকাল ডেস্ক:- ‘মুলকে শাম’ বা শাম ভূখণ্ড নবী-রাসুলদের ভূখণ্ড। কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় তার বরকত ও পবিত্রতার বর্ণনা রয়েছে। ইতিহাসের অগণিত ঘটনাপ্রবাহ তার সঙ্গে জড়িত। মক্কা-মদিনার পরই যার মর্যাদা স্বীকৃত।
পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা, সংস্কৃতির দেশ সিরিয় ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এই ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অংখ্য নবী। তারা বসবাসও করেছেন এখানে। হজরত ইবরাহিম (আ.) নিজ সম্প্রদায়ের বিরোধিতার মুখে পড়ে আল্লাহর আদেশে সিরিয়া ভূমিতে হিজরত করেন। এখানে জন্ম গ্রহণ করেন ঈসা (আ.)। হজরত মুসা (আ.) হিজরত করে আগমন করেছিলেন এখানে। আগের মুলকে শাম বর্তমানে কয়েকটি রাষ্ট্রে বিস্তৃত রয়েছে।
বর্তমানের সিরিয়া, জর্দান, লেবানন ও পূর্ণ ফিলিস্তিন ভূখণ্ড প্রাচীন মুলকে শামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই শামের সঙ্গে ভবিষ্যতের ও কিয়ামতপূর্ব অনেক ঘটনাও জড়িত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) শামের ব্যাপারে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
মুসলিমদের দ্বিতীয় হিজরতভূমি:-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, হিজরতের পর আরেকটি হিজরত শিগগিরই সংঘটিত হবে। তখন ভূপৃষ্ঠের সর্বোত্কৃষ্ট মানুষ হবে তারাই, যারা ইবরাহিম (আ.)-এর হিজরতভূমিতে (শাম দেশে) অবস্থান করবে।
হজরত মুয়াবিয়া ইবনে কুররা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন শামভূমি ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, তখন তোমাদের মধ্যেও কোনো কল্যাণ থাকবে না। আর আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, তাদের যারা ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২১৯২)
হজরত শুরাইহ ইবনে উবাইদ (রহ.) বলেন, হজরত আলী (রা.) ইরাকে অবস্থানরত অবস্থায় তাকে শামবাসীদের ব্যাপারে বলা হলো, আপনি তাদের ওপর অভিশাপ করুন! তখন তিনি বলেন, না, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে শাম ভূখণ্ডে আবদালরা (আল্লাহর ওলিদের বিশেষ দল) থাকেন, তারা ৪০ জন থাকেন, যখনই তাদের থেকে একজন মারা যান, আল্লাহ তার স্থানে অন্য একজনকে রাখেন, তাদের বরকতে বৃষ্টি হয় ও শত্রুর ওপর জয়লাভ হয়। ভবিষ্যতে তাদের অছিলায় শামবাসীদের থেকে আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৯৬)
হজরত আবুদ্দারদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মহাযুদ্ধের সময় মুসলিমদের ছাউনি হবে ‘গোতা’ শহরে, যা দামেস্ক শহরের পাশে অবস্থিত। এটি শামের উত্কৃষ্ট শহরগুলোর একটি। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৯৮)
হজরত উম্মে সালামা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুসলমানদের একজন খলিফার ইন্তেকালের পর মতানৈক্য হবে। তখন মদিনাবাসীদের একজন ব্যক্তি (মতানৈক্য এড়িয়ে যাওয়ার জন্য) মক্কায় চলে আসবেন। অতঃপর মক্কাবাসী অনেক লোক তার কাছে আসবে এবং তাকে তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘর থেকে বের করে এনে মাকামে ইবরাহিম ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে তার হাতে বাইয়াত হবে। (তিনিই হলেন ইমাম মাহদি) তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য শামবাসীদের থেকে একটি (বাতিল) দলকে পাঠানো হবে।
হজরত নাউওয়াস ইবনে সামআন (রা.) সূত্রে বর্ণিত, একটি হাদিসে দাজ্জাল সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- ‘দাজ্জাল ইরাক ও শামের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে বের হবে এবং ডানে-বাঁয়ে গোটা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করতে থাকবে। তাই হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ঈমানের ওপর অটল থাকবে।