সিলেটের গোয়াইনঘাটে বালু-পথর লুটপাটের প্রতিবাদ করায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়েছে। সেই মামলা ছাত্রনেতা আজমল হোসেন আটকও হয়েছেন। তাকে আটকের পর তার বুকে কুখ্যাত চাঁদাবাজ লিখে সেই ছবি তুলে গণমাধ্যমে সরবরাহ করেছে পুলিশ।
এখন প্রশ্ন উঠেছে আদালত কর্তৃক চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কি পুলিশ কারো বুকে চাঁদাবাজ লিখে দিয়ে সেই ছবি গণমাধ্যমে সরবরাহ করতে পারে? বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন তথ্য। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার ইসিএ ঘোষিত এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্য দিবালোকে বালু ও পাথর লুটপাট চলছে।
আর এই লুটপাট থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশ প্রতিদিনই যায় গোয়াইনঘাট থানার ওসি কাছে। সেখান থেকে এসব অর্থ ভাগবাটোয়ারা হয় সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে। যে কারনে স্থানীয় পুলিশের প্রত্যক্ষ মদদে চলছে এই ধ্বংসজজ্ঞ। আর সাধারণ মানুষ পরিবেশ ধ্বংস করে বালু-পাথর লুটে বাঁধা দিলে লুটপাটকারীরা ও পুলিশ তাদেরকে হয়রানী করে।
ফলে ইসিএ ঘোষিত এই এলাকা এখন ধ্বংসের দারপ্রান্তে চলে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোয়াইনঘাটে পরিবেশ ধ্বংস করে বালু পাথর লুটপাটের বিরুদ্ধে বেশ সক্রিয় ছিলেন ছাতনেতা আজমল। এতে করে এর স্থানীয় সুবিধাভোগী সহ পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত ছিলেন।
যার ফলশ্রুতিতে তাকে একের এক মামলার আাসামী করা হয়। এবং সর্বশেষ আজমল আটকের পর তার বুকে চাঁদাবাজ লিখে ছবি তুলে তা গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। যা দেশের প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্গন। কিন্তু এমন অপকর্ম করার পরও এখনও ববহাল তবিয়তে রয়েছেন এর সাথে জড়িত অসাধু পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সিলেট জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার। এটি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আজমল হেসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং একজন পরিবেশবাদী। তিনি নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের গোয়াইনঘাট শাখার আহ্বায়ক। চাঁদাবাজি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে তিনি গোয়াইনঘাটে আপোষহীন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আজমল দীর্ঘদিন থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং জিরো পয়েন্ট, ডাওকি নদী, বাংলাবাজার, মুক্তলা, বুদিগাও হাওরসহ ইজারাবিহীন পরিবেশ সংরক্ষিত (ECA) এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন।
তার এই প্রতিবাদী ভূমিকাকে এলাকার সাধারণ মানুষ ক্রমাগত যুক্ত শুরু করেন। তবে এই প্রতিবাদের কারণে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা তাকে একাধিকবার হত্যার হুমকি দিয়েছে। পাশাপাশি তারা বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে। এসব মামলার জের ধরে আজমল হোসেনকে আটক করা হয়েছে। জানা যায়, লুটপাটকারী চাঁদাবাজ চক্রের এক সদস্য কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার জামিন নিতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সময় সিলেট ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে র্যাব তাকে আটক করে গোয়াইনঘাট থানায় হস্তান্তর করে।
এর পর গোয়াইনঘাট থানার ওসির নির্দেশে পুলিশ অভিযুক্তদের বুকে চাঁদাবাজ লিখে ছবি তুলে তা গণমাধ্যমে প্রচার করে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মতো পুলিশ মানুষের মর্যাদা ও অধিকার ভুলুন্ঠিত করছে বলে সচেতন মহল মনে করছেন সচেতন মহল।
পুলিশে এমন কর্মকাণ্ডের আইনী বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিজ্ঞ আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, আদালত কর্তৃক দোষি প্রমাণিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কাউকে অপরাধী বলে ডিসপ্লে করা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্গন। এটি কেউ করতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে জানতে সিলেটের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানে মোটোফোনে কল দেয়া হয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।