বর্তমান যুগে ইন্টারনেট মানুষের জন্য কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা দিনদিন প্রসারিত হলেও, মোবাইল ডাটা ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম এখনো অনেকের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে, গ্রামের জনগণ ও শিক্ষার্থীরা উচ্চমূল্যের কারণে ইন্টারনেট সেবার পূর্ণাঙ্গ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যার ফলে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক খাত উন্নত করার যে সুযোগ রয়েছে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রামের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আজকাল ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস, কোর্স ও রিসোর্স সংগ্রহ করে থাকে। তবে দেশের অনেক শিক্ষার্থী শুধু ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের কারণে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছে না। শুধু শিক্ষা নয়, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার অভাব দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়-বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম-সকল কিছুতেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বেশি খরচের কারণে ইন্টারনেটের সুবিধা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। এটা উৎপাদনশীলতায় একধরনের ঘাটতি তৈরি করছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন শ্রীলঙ্কা ও ভারতে ইন্টারনেটের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। ভারতে প্রতি জিবি ইন্টারনেটের দাম যেখানে মাত্র ১০/১৫ টাকা, সেখানে বাংলাদেশে প্রায় তিন গুণ বেশি।
আরেকটি উদাহরণ-আফ্রিকার কেনিয়া। দেশটিতে মোবাইল ও ইন্টারনেট খাতে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে এবং সরকার সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করেছে। এই ধরনের উদাহরণ বাংলাদেশেও প্রযোজ্য হতে পারে, কারণ সুলভ মূল্যের ইন্টারনেট সাধারণ জনগণকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় এবং স্থানীয় ব্যবসায়-বাণিজ্যকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সহজলভ্য হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও বিভিন্ন ডিজিটাল সেবার সুবিধা নিতে পারবে।
স্বাস্থ্যসেবা, কৃষিতথ্য, সরকারি সেবা গ্রহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। ই-গভর্ন্যান্স, ডিজিটাল পেমেন্ট ও স্মার্ট গ্রাম উন্নয়নে এর বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সেই লক্ষ্যে ইন্টারনেটের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।