আহবায়ক ৫০, সদস্য সচিব ৩০ ও সদস্যরা ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে স্হান পেলেন কমিটিতে

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদলের সিলেট মহানগরের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফসর খানের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ৬ থানার আহবায়ক কমিটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

এ দুই নেতা টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের লোকজনকে কমিটিতে স্থান দিয়েছেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অপর দিকে কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা অন্য নেতাদের মতও তোয়াক্কা করেন নাই বলে অভিযোগ করেছেন নেতারা।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, টাকার বিনিময়ে অনুপ্রবেশকারী ও বিগত ১৭ বছর নিস্ক্রীয় থাকা নেতাদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদলের ৬ থানার আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে।

সুত্র বলছে ৬ থানার আহবায়ক কমিটি দিতে গিয়ে দুই নেতার পকেটে ঢুকেছে লাখ লাখ টাকা। সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের বিভিন্ন সুত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সুত্র জানায়, আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক পদে এ দুই নেতা নিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা করে। সদস্য সচিব পদের জন্য নিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা আর সদস্যদের বেলায় নিয়েছেন ১০ হাজার টাকা করে।

তবে পদ পদবীতে আসিন হওয়া নেতারা বলছেন আমরা কোন টাকা দিয়ে পদ পাইনি। আমরা দলের কাজ করে পদ পেয়েছি। কিন্তু ত্যাগীরা বলছে অন্য কথা, তাদের ভাষায় বিগত ১৭ বছর উনারা কোথায় ছিলেন? রাজনীতির ময়দানে নাকি আওয়ামিলীগের ড্রইং রুমে!

যুবলীগ ক্যাডার ও মামলার আসামী রাজু

এদিকে সদ্যঘোষিত আহবায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে মহানগরের ৬ টি থানার ত্যাগী পদ বঞ্চিত নেতা ও পদ পদবী পাওয়া নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যে কোনো সময় এই দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

ইতিমধ্যে পদ বঞ্চিত ত্যাগীরা নগরের বিভিন্ন স্হানে ঝাড়ু মিছিল করে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফসর খানের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে তাদের দেয়া কমিটি বাতিলের দাবী জানিয়েছন। নগরীর টিলাগড়, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, শাহপরান গেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিল বের করা হয়।

পদ বঞ্চিত নেতাদের দাবী পতিত ফ্যাসিবাদের আমলে যারা জেল জুলুম, মিথ্যা মামলা, বাড়িঘর ভাংচুরসহ নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে কমিটিতে না রেখে সুবিদাভোগীদের দিয়ে পকেট কমিটির করা হয়েছে।

সদ্যঘোষিত ৬ থানা কমিটি মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত হলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মঙ্গলবার রাতেই সদ্যঘোষিত কমিটি বিলুপ্তির দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল করেন পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা।

সেই সাথে কমিটিতে স্হান পাওয়া আওয়ামিলীগের নেতা কর্মীদের তথ্য প্রমানসহ ফেসবুকে ভাসতে থাকে পোষ্ট ও মন্তব্য।

স্বেচ্ছাসেবকদলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিগত সতেরো বছর যারা বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিল এবং ফ্যাসিবাদের পক্ষে ছিল তাদেরকে দিয়ে বিতর্কিত কমিটি করা হয়েছে। তারা বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে কমিটি করা হয়েছে যেখানে ত্যাগীদেরকে মূল্যায়ন করা হয়নি।

যুবলীগের রাশেদ এখন স্বেচ্চাসেবকদলের আহবায়ক

স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মেহেদি হাসান সফু তার ফেসবুকে লাইভে বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে তার সব হারিয়েছেন। আওয়ামিলীগের নির্যাতনে তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক ছিলেন।

তাকে বিভিন্ন মামলায় আসামী করা হয়েছে। তার উপর ছোড়া গুলি তার মায়ের শরীরে লেগেছে অথচ থাকে মুল্যায়ন করা হয়নি।

আরেক নেতা দুলালও তার ফেসবুক লাইভে এসে মহানগরের আহবায়ক ও সদস্য সচিবের কির্তীকলাপ তুলে ধরে বলেন, বর্তমান কমিটি দিতে গিয়ে কে কত নিয়েছেন তা জানা আছে।

তিনি বলেন রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি, কখনও দালালি করিনি। যার জন্য সংসার ছেড়ে বনে জঙ্গলে থাকতে হয়েছে। অথচ আজ যারা আওয়ামিলীগের দালালি করেছে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

শুধু সফু ও দুলাল নয় এরখম অনেক নেতা কর্মী বিগত ১৭ বছরের আওয়ামী নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তাদের ফেসবুকে পোষ্ট দিচ্ছেন।

কমিটি বাতিল চে্য়ে ঝাড়ু মিছিল

স্বেচ্ছাসেবকদলের সিলেট মহানগের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফসর খানের কাছে এ বিষয়ে জানার জন্য মোবাইলে কল দিলে তা রিসিভ করেননি।

পরবর্তীতে দু’জনকে এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসআ্যপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে তারও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।