বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন

এমসি কলেজ সড়ক দখল করে ছলছে ইট-বালুর রমরমা বাণিজ্য

প্রথম সকাল ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৭৩ বার পড়া হয়েছে

সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের রাস্তা দখল করে চলছে রমরমা ইট-বালুর বাণিজ্য। দীর্ঘদিন ধরে এই বাণিজ্য চললেও কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। ফলে সংশ্লিষ্টরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কারণে সড়ক সরু হয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে করে সমস্যায় পড়ছেন কলেজের ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীরা।

মাঠে খেলতে আসা লোকজনকেও পোহাতে হচ্ছে বিপত্তি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটের আম্বরখানা-টিলাগড় সড়কের বালুচর পয়েন্ট সংলগ্ন স্থানে রয়েছে এমসি কলেজের ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ। এই মাঠ ও ছাত্রাবাসের মধ্যবর্তী স্থানে থাকা সড়কে স্থানীয় বালু-পাথরের ব্যবসায়ী ও ট্রাকের চালকেরা বালু রেখে ব্যবসা করছেন।

সড়কের বালুচর পয়েন্ট থেকে মদনীবাগ পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় অর্ধকিলোমিটার জায়গাজুড়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। ট্রাক চালকেরা বড় ট্রাকে করে একসাথে অনেক বালু এনে রাখে এই স্থানে। পরে সেখানে থেকে ট্রাক বা পিকআপে করে অন্যত্র তারা বালু বিক্রি করে দেয়। এতে করে সড়কটি সরু হয়ে পড়ছে আর ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থী ও মাঠে খেলতে আসা লোকজন পড়ছেন দুর্ঘটনার সম্মুখীন।

এমসি কলেজ ছাড়াও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট সরকারি কলেজ, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, স্কলার্সহোমসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এ সড়কটি ব্যবহার করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। সরেজমিনে এমসি কলেজের খেলার মাঠের সামনের রাস্তা ও ছাত্রাবাসের সামনের রাস্তায় বেশ কয়েকটি বালুর স্তুপ চোখে পড়বে।

যেগুলোর ২টি স্তুপ থেকে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বালু। আর বাকি জায়গায় স্তূপ করে রাখা রয়েছে বালু। এছাড়া এমসি কলেজ মাঠ ঘেষে সৈয়দ হাতিম আলী স্কুলে যাওয়ার এমসি কলেজের নিজস্ব সড়কেও ইট স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এভাবেই চলছে এখানে বালু-ইট ও পাথরের ব্যবসা। এগুলোতে স্থানীয় ট্রাক চালক ও ব্যবসায়ীরা জড়িত।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এবিষয়ে জড়িত নয় বলে প্রথমে এ প্রতিবেদককে জানায়। পরে স্বীকার করেন তারা এর সাথে আগে জড়িত ছিলেন; এখন আর নেই। আবার কেউ কেউ জানান, তারা বালু রেখেছিলেন, সরিয়ে নেবেন। তখন তারা এখানে আরো লোকজন রাখে বলেও নাম বলেন।

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী সাকিব জানান, দীর্ঘদিন ধরে এখানে বালু-পাথর ও ইট রেখে ব্যবসা করা হচ্ছে। রাস্তা দখল করে তারা এমনভাবে ব্যবসা করছে, যেন এটা তাদের নিজস্ব জায়গা। এখানে বালু-পাথর রাখার ফলে রাস্তা সরু হয়ে গেছে আর রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না। এতে করে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনায় পড়তে পারে।

এর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই রাস্তা বালু-পাথর রাখার স্থায়ী জায়গা হয়ে যাবে। আগে মাঝে মধ্যে ব্যবস্থা নিলেও স্থায়ী কোনো তদারকি না করার কারণে পুনরায় এগুলো শুরু হয়। বালু ও ইটের ব্যবসার সাথে জড়িত থাকা বালুচর পয়েন্টের সিয়াম এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মো. সমশের আলী সন্তু জানান, আমি মাঠের গেইটের বা-পাশে বালু রেখেছিলাম।

এটা আজ সরিয়ে নিয়েছি। আর কিছু রয়েছে। আমি আগে মাঝেমধ্যে রাখতাম এখন আর রাখি না। হাতিম আলী স্কুলের রাস্তায় কিছু ইট রাখছিলাম, সেটাও আজ সরিয়ে নেবো। অভিযুক্ত লিটন নামে এক ট্রাক চালক জানান, ‘এমসি কলেজের মাঠের সামনে আমার বালু নাই।’ পরে আবার বলেন, ‘আমার আগে বালু এখানে রাখা ছিল। সেগুলো নিয়ে এখন ৩০-৪০ ফুট বালু আছে। এখানে ড্রাইভাররা বালু রেখে পরে অন্যত্র নেয়।’

ফরহাদ নামে এক বালু ব্যবসায়ী জানান, এখানে আমি মাঝে মধ্যে বালু রাখি। শুধু আমি না আরো অনেকে বালু রাখেন এবং এখনো অনেকের বালু আছে। বর্তমানে এই সড়কের টার্নিংয়ের কাছে আমার কিছু বালু আছে। আকবর নামে অভিযুক্ত আরেকজন জানান, আমি এখানে বালু রাখি না। আমি পাথর-বালু সাপ্লাইয়ার। এখানে অন্যরা বালু রাখে। ভার্সিটির রাস্তা খারাপ থাকায় ৩ মাস আগে একবার বালু রেখেছিলাম।

পরে সাথে সাথে সরিয়ে নিয়েছি। এ বিষয়ে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম আহমদ খান বলেন, বিষয়টি আমরা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (এসএমপি)-কে জানিয়েছি। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি এখন জানলাম। আমরা বিষয়টি দেখছি। কলেজ প্রশাসন থেকে থানায় জানালে তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান (র.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন জানান, এটি সিটি করপোরেশনের কাজ, তবুও আমরা এটা দেখবো।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020-2025 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!