ওয়াজ মাহফিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নিয়ে মিথ্যা এবং বিতর্কিত বয়ান করেছেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ আসনের জামায়াতের প্রার্থী আলোচিত ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা। দেশের তৌহিদা জনতার ধর্মভীরুতাকে পুজি করে জামায়াতের রাজনীতি তথা মওদুদীবাদী চেতনার প্রচার করেন আমির হামজা।
কিন্তু দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মিথ্যা বক্তব্য দেয়ায় তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুখ ফসকে কথা বের হয়েছে, ইচ্ছে করে বলিনি’। আমির হামজাকে জামায়াত থেকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে এবং ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক বিতর্কিত বিষয়ে বক্তব্য না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে আমির হামজা নিজেই এ তথ্য জানিয়ে মিথ্যা বয়ানের কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সংগঠন থেকে বিতর্কিত রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীলরা বলেছেন। দুজন কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল জানিয়েছেন- মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার সময় যেন সতর্ক থাকি। কোরআনের তাফসিরের বাইরে আর কিছু বলব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনো বিষয়ে তুলনা করে কথা বললেই প্যাঁচ লেগে যায় উল্লেখ করে মুফতি আমির হামজা বলেন, ‘আমি আর এসবের মধ্যে নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলে আজান দেওয়া নিয়ে বক্তব্যের সমালোচনা হচ্ছে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নাম বলতে গিয়ে মুহসিন হলের নাম বলেছি। এটা মুখ ফসকে হয়েছে। এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। মুহসিন হলে ছাত্রলীগের জমানায় জুলুম-অত্যাচার হয়েছে। বাথরুমে নামাজ আদায় করার কথা শুনেছি। কিন্তু আমার এভাবে বলা উচিত হয়নি। আগামীতে সতর্ক থাকব।’ আমির হামজার এই মিথ্যা তথ্য দিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর প্রতিবাদ করে মুহসিন হল মসজিদের মুয়াজ্জিন বলেছেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে মসজিদে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত আজান দেই।
কখনো প্রতিবন্ধকতার শিকার হইনি। তবে যখন ছুটিতে যাই তখন হলের শিক্ষার্থীরা আজান দেয়’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে মদের বোতল নিয়ে বলা কথারও সমালোচনা হচ্ছে জানিয়ে আমির হামজা বলেন, ‘আমি তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছিলাম। ক্যাম্পাসে কী হতো সবাই জানে। আমি কি অপরাধ করলাম? এখন বলেছে, এসব বোতলে পানি খায়। যদি তাই হয় আমি দুঃখিত।
ওয়াজ করতে গেলে নানা বিষয়ে তুলনা করে কথা বলি, এতে ভুল হয়। আওয়ামী লীগের আমলে জেলখানায় আমার ওপর অত্যাচার হয়েছে। আমি এখনো সুস্থ নই। কথা বলতে গেলে ভুল হয়, সতর্ক থাকব।’ অথচ ইউটিউবে রয়েছে আমির হামজার একাধিক ওয়াজে তিনি বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমার দাদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ভারনের দক্ষিণের অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানাকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে আমির হামজা বলেন, ‘মা হাওয়ার সৌন্দর্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে আমি এ কথা বলেছিলাম।
এজন্য মাফ চেয়েছি, আর কোনোদিন এসব বলব না। কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ প্রসঙ্গত, বিতর্কিত কথাবার্তার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আড়াই বছর কারাভোগ করেন আমির হামজা। ২০২১ সালের ২৪ মে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের ডাবিরাভিটা এলাকার গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসির একটি দল। পরের দিন তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর কারামুক্ত হন তিনি। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আমির হামজা জেলা জামায়াতের ইউনিট সদস্য হিসেবে রয়েছেন।