রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন

গাজা খালি করার পরিকল্পনা ট্রাম্পের : ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা 

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১০২ বার পড়া হয়েছে

প্রথম সকাল ডেস্ক:- সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা খালি করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তিনি গাজাবাসীদের মিশর এবং জর্ডান পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

গত শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন।

ট্রাম্প জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহকে বলেছেন, আমি চাই আপনি আরও বেশি দায়িত্ব নিন, কারণ আমি গাজার পুরো চিত্র দেখছি। এটি একেবারেই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। রোববার মিশরের প্রেসিডেন্টকেও একই ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে এটা কী স্বল্প, না কি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এমন প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এই পদক্ষেপ স্বল্প মেয়াদী কিংবা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে হামাস।
হামাস বলছে, এই উদ্যোগ বা প্রস্তাবনা গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য ক্ষোভের কারণ হতে পারে। কারণ তারা এই ভূখণ্ডকে তাদের নিজেদের ভিটেমাটি হিসেবেই দেখে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসিম নাইম বিবিসিকে বলেছেন, ১৫ মাস ধরে গাজার ফিলিস্তিনবাসী যুদ্ধ ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে সব কিছু সহ্য করেছে।
কিন্তু তারা তাদের নিজ ভূখণ্ড ছেড়ে যায়নি। এখন তারা এই ধরনের প্রস্তাবনা বা সমাধান গ্রহণ করবে না। এমন কী সেটি যদি পুনর্গঠনের নামে ভালো উদ্দেশ্যেও হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, গাজাবাসী যেমন আগেও যেমন তাদের বাস্তুচ্যুত করার সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেছে, এখনও এমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হলে তা ব্যর্থ করে দেবে।
গাজার বিশ লাখেরও বেশি মানুষ গত ১৫ মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে বাস্তুহারা হয়েছে। এই যুদ্ধ গাজার বেশির ভাগ অবকাঠামোই ধ্বংস করে দিয়েছে।
জাতিসংঘের ধারণা গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো এই যুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। যা ঠিক করতে কয়েক দশক সময় লাগতে পারে।
ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া:- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আপনারা বলছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কথা, এদেরকে সরিয়ে নিতে হবে আমাদের।
কারণ সেখানকার সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ সেখানে মারা যাচ্ছে। আমি আরব দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চাই, যাতে অন্য কোথাও তাদের জন্য বাড়ি তৈরি করা যায়, যেখানে তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
তবে ট্রাম্প যে এই প্রস্তাব দিয়েছেন এ নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু তিনি জানাননি। হোয়াইট হাউস থেকে ফোনালাপের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গাজার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত তারা মানবেন না।
গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের বাস্তুচ্যুত আবু ইয়াহিয়া রাশিদ বলেন, আমাদের ভাগ্যে কী আছে, এবং আমরা কী চাই, সে সিদ্ধান্ত আমরাই নেবো। এই মাটি আমাদের এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি। যদি এই মাটি ছাড়তেই হয় তাহলে আমরা লাশ হয়েই ছাড়বো।
এক দশক ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। এই নীতির আওতায় গাজাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হয়। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেটি বরাবরই প্রত্যাখান করে আসছেন।
এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল যে, তারা গাজা বা অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তু-চ্যুতির বিপক্ষে।
২০২৩ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, “তারা গাজা ছাড়তে বাধ্য হতে পারে না এবং উচিতও নয়।”
জর্ডান ও মিশরের অবস্থান:- জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী জর্ডানে বসবাস করে, যাদের বেশির ভাগকেই নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। মূলত তারা সেই ৭ লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনির বংশধর, যারা ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় বাস্তচ্যূত হয়েছিলেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমদিকে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি পালিয়ে মিশরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে, এখনো মিশর তাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সিনাই পেনিনসুলা মরুভূমিতে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তখন তিনি বলেছিলেন, তার মতে গাজার এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা।
ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে নতুন বিতর্ক:- আগে থেকেই ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীরা গাজায় ফিরে বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দিচ্ছে। ২০০৫ সালে ইসরায়েল একতরফাভাবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে, ২১টি বসতি ভেঙে এবং প্রায় ৯ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়।
ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী নেতা সাবেক জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই প্রস্তাবের প্রশংসা করেন, যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিশরে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন।
এর আগে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বেন-গাভির বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। বেন-গাভির তার এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে লিখেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি একটি দাবি হলো স্বেচ্ছামূলক অভিবাসনকে এগিয়ে নেওয়া।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য এলো এমন একটা সময়ে যখন ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলার পর গাজার উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুতদের ঘরে ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে।
সেখানকার এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন, সেখানে কিছু নেই- কোনও জীবন নেই, সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। তবুও নিজের জমিতে, নিজের বাড়িতে ফিরে আসার আনন্দ অমূল্য।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আসার পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তেল আবিবে পাঠাতে যাওয়া ২০০০ পাউন্ডের শক্তিশালী একটি বোমার চালান আটকে দিয়েছিলেন।
চলতি মাসে ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েলকে ওই শক্তিশালী বোমার চালান পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা এর জন্য অর্থ দিয়েছে এবং অনেক দিন ধরে এর জন্য অপেক্ষা করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। তবে গাজায় যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের কারণে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ বা কমানোর দাবি নতুন করে উঠেছে।
এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020-2025 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!