ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে কমপক্ষে ৮৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, এখনো অন্তত ৫৪৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এই দুর্যোগে প্রায় ২ হাজার ৭০০ জন বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। প্রাথমিক অনুমানে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার তথ্য অনুসারে, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে চলমান বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের ফলে কাদামাটি ধসে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার প্রচেষ্টা জটিল হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বন উজাড়, বন উজাড় করে নতুন বৃক্ষরোপণ ও খনির জন্য বন উজাড় করে ফেলার কারণে প্রাকৃতিক ‘সুরক্ষামূলক আবরণ’ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় মহাকাশ তোলা ছবিতে দেখা গেছে, আকস্মিক বন্যার ফলে বিশাল কাঠের স্তূপগুলো ভেসে যাচ্ছে।
জাকার্তা পোস্ট জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান ধারাবাহিকতায় দেশটিতে ২০২৪ সালে বন উজাড়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই বছরটিতে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ হেক্টর বনভূমি ‘ধ্বংস’ করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৪ হাজার ৩০০ হেক্টর বেশি। দেশটির বন উজাড় পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নুসানতারা অ্যাটলাসের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড গ্যাভোর মতে, বেশিরভাগ ক্ষতি সুমাত্রায় ঘটেছে।
অঞ্চলটিতে ২০০১ সাল থেকে ৪৪ লাখ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। এটি সুইজারল্যান্ডের চেয়েও বড় একটি এলাকা। ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সুমাত্রার বন্যা কবলিত এলাকায় বন ধ্বংসের অভিযোগে বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। বনমন্ত্রী রাজা জুলি আন্তোনি সম্প্রতি পার্লামেন্টে বলেছেন, সরকার বন শাসন পর্যালোচনা করবে, নতুন পারমিট স্থগিত করার কথা বিবেচনা করবে এবং লঙ্ঘনকারীদের লাইসেন্স বাতিল করবে।
দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী বাহলিল লাহাদালিয়াও ইঙ্গিত দিয়েছেন, নিয়ম লঙ্ঘন করা হলে খনির পারমিট বাতিল করা হতে পারে। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কিছু অংশ এবং পশ্চিমে শ্রীলঙ্কাও চরম আবহাওয়ার কবলে পড়েছে। গত কয়েকদিনে চরম আবহাওয়াজনিত কারণে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।