মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন

অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত

প্রথম সকাল ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

চাঁদাবাজি, দখলবাজি দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী একাধিক অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে দলীয় সকল পদ থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার (১১ আগস্ট) দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাহাব উদ্দিনের স্থলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি হাজী আব্দুল মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। দলের ভাবমূর্তি রক্ষা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

এর আগে তার বিরুদ্ধে প্রায় ১৫০ একর সরকারি জমি দখলের অভিযোগ উঠে। তার দখলে থাকা জমি তিনি পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেন। তবে দুই বছর আগে অভিযান চালিয়ে তার দখলে থাকা জমি উদ্ধার করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। পরিবর্তিত গত ৫ আগস্ট বিকেলে তিনি আবার সে জমি দখলে নেন।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকেলে সাহাব উদ্দিনের লোকজন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আবার ওই জমির দখল নেন। তখন তার অনুসারীরা স্থলবন্দর নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারদের জিনিসপত্র ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। ওই মহলটি পর্যটনের উন্নয়নে নির্মিত সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে। পরে নির্মাণাধীন স্থলবন্দরের ৫২ দশমিক ৩০ একর জমি ছাড়া উভয় পাশের প্রায় ২০০ একর জমির দখল নেন সাহাব উদ্দিনসহ স্থানীয় কয়েকজন।

স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ভোলাগঞ্জে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্থলবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করে তৎকালীন সরকার। পাশাপাশি পর্যটনের উন্নয়নে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়। এ অবস্থায় দুই বছর আগে সরকারি জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালায় স্থানীয় প্রশাসন। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে আবার সে জায়গা দখল করা হয়।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিমে ১১২ একর ও পূর্বে প্রায় ১৫০ একর খাসজমি আছে। এসব জমির বেশির ভাগই অবৈধভাবে ভোগ দখল করে আসছিলেন বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন। তবে সরকার সেখানে স্থলবন্দর নির্মাণ ও পর্যটনের উন্নয়নের উদ্যোগ নিলে ২০২৩ সালে জায়গা দখলমুক্ত করে প্রশাসন। এরপর পশ্চিম অংশে স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৫২ দশমিক ৩০ একর জমি ইজারা নেয় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। গত বছরের জুন মাসে স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু করে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের জুলাই মাসে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, স্থলবন্দর নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যখন জমি ইজারা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে, তখন সাহাব উদ্দিনের ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচিত নির্মল কুমার সিংহ ও তার ভাই উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করেন। পরে আদালত সরকারের পক্ষে রায় দিলে জায়গাটি প্রায় ৮ কোটি টাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্থলবন্দর নির্মাণে ইজারা দেওয়া হয়।

অন্যদিকে সিলেট-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্ব অংশে ধলাই নদের পাড় পর্যন্ত প্রায় ১৫০ একর সরকারি খাসজমিতে স্থানীয় পর্যটনশিল্পের বিকাশে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে উন্নয়নকাজ শুরু করে। এ জন্য এসব জায়গা থেকে পাথর ভাঙার মেশিন অপসারণ করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ও মাটি ভরাটের কাজ করা হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের জন্য পশ্চিম অংশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জায়গা অধিগ্রহণ করার পর অতিরিক্ত প্রায় ৫৮ একর জায়গা উন্মুক্ত হিসেবে আছে। পাশাপাশি পূর্ব অংশে পর্যটনের উন্নয়নে ব্যবহৃত ১৫০ একর জমি ৫ আগস্টের পর বেদখল হয়ে যায়। এর মধ্যে সাহাব উদ্দিনের দখলেই সিংহভাগ জায়গা আছে।

অভিযোগ আছে, সরকারি জমির দখল টিকিয়ে নিজের সাম্রাজ্য ঠিক রাখতে সাহাব উদ্দিন শুরু থেকেই স্থলবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন। স্থলবন্দর নির্মিত হলে এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে আনা কয়লা, চুনাপাথর ও পাথরে কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না-এটাও বিরোধিতার অন্যতম কারণ।

জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর একটি লিখিত আবেদন করে নির্মাণাধীন স্থলবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন সাহাব উদ্দিন। এ ছাড়া গত ২২ ফেব্রুয়ারি তার নেতৃত্বে ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের ব্যানারে সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সাহাব উদ্দিন ওই গ্রুপের উত্তর সভাপতি। সংবাদ সম্মেলনে ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করা হয়।

এদিকে ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জায়গাটি দেখতে যান বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। গত ২৬ ডিসেম্বর তিনি একটি প্রতিবেদনও প্রস্তুত করেন। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি লিখেছেন, ৫ আগস্ট ও তৎপরবর্তী সময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সব স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই দিন ওই ব্যক্তির নেতৃত্বে ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর নির্মাণে রাখা ঠিকাদারের সব যন্ত্রপাতিতে আগুন দেওয়া হয় এবং রক্ষিত মালামাল লুট করা হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বন্দরের উন্নয়নকাজ চলমান রাখা হয়েছে।

প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করলেও ওই ব্যক্তি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন বলেন, স্থলবন্দরের উন্নয়নকাজের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করে।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020-2025 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!