মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন

সিলেটের পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

প্রথম সকাল ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬০৩ বার পড়া হয়েছে

সিলেটের পুলিশ কনস্টেবল স্বামী মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন স্ত্রী তাছমিনা বেগম। প্রথমে ডিআইজি’র কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর সিলেটের আদালতে করেছেন মামলাও। আর এই মামলায় তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধরের অভিযোগ করেছেন। স্ত্রী তাছমিনা আক্তারের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার নলবনিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম আব্দুল কাদির। আর পুলিশ কনস্টেবল মাহফুজুর রহমানের বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার গোরাগ্রামে। তার পিতার নাম জালাল উদ্দিন। বর্তমানে ওই পুলিশ সদস্য হবিগঞ্জের বাহুবল থানায় কর্মরত রয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। 

গত রোববার সিলেটের অতিরিক্ত চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামী মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাছমিনা বেগম। মামলায় তিনি জানান, ২০২১ সালে ১০ই অক্টোবর মাহফুজের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মাহফুজ এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তাকে নানা সময় মারধর করে। পরে তাছমিনা তার ব্যবহৃত স্বর্ণের চেইন ও আংটি বিক্রি করে স্বামীর হাতে ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন। এতেও তার স্বামী সন্তুষ্ট না হওয়ায় তিনি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ তুলে স্বামীর হাতে দেন। তবু তার অর্থলোভী স্বামী তাতেও সন্তুষ্ট হয় না। হবিগঞ্জের বাহুবলের ভাড়া বাসায় নিয়ে যৌতুকের জন্য খুব বেশি মারধর করেন। এতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পিতা আব্দুল কাদির এসে বাধা দেন। এতে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে তার পিতাকে অপমান করে।

সর্বশেষ গত ৩রা জুন রাতে মাহফুজ নেশাগ্রস্ত হয়ে ৭০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে অকথ্য নির্যাতনও করা হয়। শেষে তাছমিনা তার পিতার বাড়ি চলে যান বলে মামলায় উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে তাছনিমার মামলার লিগ্যাল এইডের নিযুক্ত আইনজীবী এডভোকেট ফয়েজ আহমদ  জানিয়েছেন, তাছনিমার পক্ষ থেকে আদালতে যে এজাহার দাখিল করা হয়েছিল সেটি গ্রহণ করা হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত একমাত্র আসামি মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এদিকে, মামলা দায়েরের আগে গত ২৯শে জুলাই সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তাছনিমা বেগম। সেই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২১ সালে রাঙ্গামাটি কলেজে পড়ার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তৎকালীন ঢাকার এসপিবিএন-১ এ কর্মরত মাহফুজের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই সময় মাহফুজ তাকে ঢাকায় তার মামার বাসায় নিয়ে তিনদিন আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। পরে ধর্ষণের ঘটনা থেকে বাঁচতে তিনি ৩ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় মাহফুজের মামাও উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পর স্বামী মাহফুজ তাকে যৌতুকের টাকার জন্য প্রায় সময় মারধর করতেন। সিলেটে বদলি হয়ে আসার পর সেখানে নিয়ে এসেও মারধর করতেন। 

অভিযোগে তাছমিনা উল্লেখ করেন, বাহুবল থানার পাশে এক ভাড়া বাসায় রেখে কয়েক মাস আগে তিনি বাড়িতে চলে যান। কোনো খোঁজখবর না পেয়ে তিনিও ওই সময় মাহফুজের খোঁজে গোয়াইনঘাটের গোরাগ্রামে যান। কিন্তু বাড়িতে গেলে মাহফুজ জানায়, ‘তাকে (স্ত্রী) চিনে না’। পরবর্তীতে বিষয়টির সুরাহার জন্য তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিনের দ্বারস্থ হন। এসময় চেয়ারম্যান বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করেও পারেননি। পরে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন। এ ঘটনার পর ফের মাহফুজ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাহুবলের বাসায় যান। আগের মতোই যৌতুকের টাকার জন্য চাপ ও নির্যাতন করতে থাকে। একপর্যায়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে এবং বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর তিনি হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের পাশে তার এক বান্ধবীর বাসায় আশ্রয় নেন।

তাছমিনা বেগম জানিয়েছেন, তার স্বামী বহু নারীতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি বর্তমানে আরেকটি বিয়ে করতে চান। এবং সেই বিয়ের সুযোগ দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, বিয়ে করলেও তাকে এখনো তার স্বামী বাড়িতে নিয়ে যায়নি। ভাড়া বাসায় রেখে বসবাস করছিলেন। তিনি বাড়ি চলে গেলে তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। শুধু সে নয়, তার পরিবার থেকেও তিনি ভালো আচরণ পাননি। এ কারণে ন্যায়বিচার পেতে এখন তিনি আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন। এ ব্যাপারে কনস্টেবল মাহফুজের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

তবে, স্থানীয় রুস্তুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন  জানিয়েছেন, গত বছর ওই মেয়েটি মাহফুজের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তার কাছে এসোছিল। ওই সময় তিনি মাহফুজের মাকে ডেকে আনার পর মেয়েটিকে তারা বাড়িতে নিয়ে যায়। কিছুদিন বাড়িতে থাকার পর যখন মেয়েটি চলে যায় তখন মাহফুজের মা জানিয়েছিলেন- ওই মেয়েটি তাদের বাড়িতে থাকতে চায় না। তাদের সঙ্গে মেয়েটির বনিবনা হচ্ছিলো না। এ কারণে চলে গেছে। এবারো মেয়েটি আবার এসেছিল। চেয়ারম্যান জানান, মাহফুজের পরিবার বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছিল। তারা মেয়েটির ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টাও করেন। কিন্তু মেয়ের তরফ থেকে সাড়া না পাওয়ায় সেটি আর সমাধান হয়নি। এখন আদালতই বিষয়টি দেখবে। সুত্র:- মানবজমিন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020-2025 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!