পাহাড়-টিলা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে কিন্তু বর্তমানে পরিবেশগত বিপর্যয়ের একটি আতঙ্ককের নাম পাহাড়ধস।
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে পাহাড় ধসজনিত ভয়াবহতা পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ এবং সাধারণ মানুষকে নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে। ভাবতে বাধ্য করেছে যে, পরিবেশের ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত এবং ধসজনিত বিপর্যয় মোকাবিলায় আমাদের করণীয়গুলো কেমন হওয়া উচিত।
গত বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটে পাহাড়ধসে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রায়ই পাহাড়ধসে এমন মৃত্যুর খবর আমরা পাই।
সিলেটে পাহাড়ী এলাকায় আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে সব সময় ভয়, আতঙ্ক লেগেই থাকে। তার কারন বৃষ্টি হলেই নেমে আসে বিপর্যয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ঘটছে এ ধরনের ঘটনা? এটা কি শুধুই বৃষ্টিপাতের ফলাফল, নাকি অন্য কারণ? আমরা মনে করি, শুধু ভারী বৃষ্টির জন্যই পাহাড় ধস হচ্ছে না।
বন-পাহাড় ধ্বংস করা, মাটি কাটা, বসতি স্থাপন করা, প্রাকৃতিক গঠনকে বিবেচনায় না নিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি করা এ সবকিছু মিলিয়ে এ ধরনের একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও আছে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন, রাস্তা ও সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক স্থাপনা নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানা।
উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও আরেকটি মূল কারণ। তাছাড়াও আছে পাহাড়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব। মাটি পরীক্ষার ফলাফল যথাযথভাবে অনুসরণ না করে পুরোনো অ্যালাইনমেন্টের ওপর কাজ করাও আরেকটি কারণ। বলা যায় যে, নানা কারণেই পাহাড় ধসের মতো বিপর্যয় ঘটে থাকে পাহাড়ধস বেশি হয় মূলত বর্ষা এলেই। প্রতিবছরই এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা ঘটে সিলেট অঞ্চলে।
আমরা জানি যে, যেখানে পাহাড় আছে, সেখানে ভূমিধস হবেই। সেটা রূপান্তর, আগ্নেয় বা পাললিক শিলা যেটাই হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই সাধারণত পাহাড়ধস হয়। বরাবরই এমনটি হয়ে আসছে। উন্নত দেশ আমেরিকা, সেখানেও ভূমিধস হওয়ার কথা শোনা গেছে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ পাহাড় গঠিত পাললিক শিলা দিয়ে। এখানে ভূমিধস বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। কয়েক দশক আগেও ভূমিধস হতো, কিন্তু তখন এভাবে মানুষের মৃত্যু হতো না। তাই এই বিষয়টি নিয়ে এতো আলোচনা হতো না বলে মানুষ তা জানতেও পারত না। অতীতের চেয়ে বর্তমানে পাহাড়ধস আগের থেকে বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়গুলোর মধ্যে ভূতাত্ত্বিক গঠন রয়েছে তিন ধরনের। এগুলো হলো—বালুপ্রধান, স্যান্ডশেল অল্টারনেশনস (বালুমাটির স্তরবিশিষ্ট) ও কাদাপ্রধান পাহাড়। স্যান্ডশেল অল্টারনেশনস পাহাড়গুলো ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
যে পাহাড়গুলোর ঢাল ও এর ভেতরের ভূতাত্ত্বিক স্তর যখন একই দিকে থাকবে, সে পাহাড় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আবার যেসব পাহাড়ের ঢাল ও এর ভূতাত্ত্বিক স্তর বিপরীতমুখী, সেগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ।
পাহাড়ধস রোধে করণীয় সম্পর্কে এখনই ভাবতে হবে। বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ করে যেখানে যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ঘনবসতি রয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে বিশেষ নজরদারি ও তদারকি করা প্রয়োজন।
তা ছাড়া পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে। অতএব পাহাড় কাটা বন্ধ এবং পাহাড়ধস রোধে যা যা করণীয় সে বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ পরিবেশ রক্ষায় এর কোনো বিকল্প নেই।