সিলেটে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মী তুষার হত্যা মামলার প্রধান আসামী পারভেজকে নিয়ে তৈরী হয়েছে ধ্রুমজাল।
র্যাবের হাতে গ্রেফতার পারভেজ প্রধান আসামী নাকি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া পারভেজ প্রধান আসামী!
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকা থেকে তুষার হত্যা মামলার প্রধান আসামী পারভেজকে গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাবের এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটা জানানো হয়।
র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত পারভেজ (২৬) নগরীর বাগবাড়ী এলাকার তাজুদ মিয়ার ছেলে বলেও জানানো হয়। তার ঠিক একদিন পর অর্থাৎ রোববার (২০ এপ্রিল) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপির) ফেসবুক পেইজে র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত পারভেজ তুষার হত্যার প্রধান আসামী নয় বলে জানানো হয়।
পুলিশ জানায়, তুষার হত্যাকান্ডের পরপরই একটি স্বার্থান্বেষী ও কুচক্রীমহল সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ গ্যালারিয়া শপিং কমপ্লেক্স এর দোকান কর্মচারী পারভেজকে এই হত্যাকান্ডের মূল আসামী বলে তার ছবি এবং ফেসবুকের প্রোফাইল লিংকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারের মাধ্যমে ঘটনার মূল আসামীকে আড়াল করার অপচেষ্টা করে।
যা এসএমপি কর্তৃপক্ষের নিবিড় তদারকি ও তদন্ত টিমের তৎপরতায় নস্যাৎ হয়। সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষনের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, উক্ত দোকান কর্মচারী পারভেজ, তুষার হত্যাকান্ডের মূল আসামী পারভেজ নয়। সেই সাথে তুষার হত্যার সঠিক প্রধান আসামীসহ দুইজনকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানানো হয়।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, তুষার হত্যার ঘটনার সংবাদ পাওয়া মাত্র হত্যাকান্ডে জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযানে নামে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।
পুলিশের নানামুখী তৎপরতায় ঘটনার আড়াই ঘন্টার মধ্যেই হত্যাকান্ডে জড়িত জাবেদ (২৫) কে নগরীর মজুমদারী এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। পরে নিহতের পিতা ১৬ এপ্রিল এয়ারপোর্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১১।
পুলিশ জানায়, ঘটনার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত মূল আসামী পারভেজকে গ্রেফতারে মাঠে নামে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুল বাছেত সরকারের নেতৃত্বে একটি টিম।
এসএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও দিক নির্দেশনায় ধারাবাহিক অভিযানে রোববার (২০ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২ ঘটিকার সময় ঢাকার পূর্বাচল সংলগ্ন গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানা এলাকা হতে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ঘাতক পারভেজ (২০) ও ঘটনায় জড়িত অপর সহযোগী রাজু দাস (২৩)কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রাজু দাস
পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া পারভেজ বালাগঞ্জ থানার জালালপুর গ্রাম বর্তমানে এয়ারপোর্ট থানার কলবাখানী এলাকার মোঃ সুনাফর আলী সানোয়ারের ছেলে।
অপরদিকে রাজু দাস সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার চন্নাচর গ্রাম বর্তমানে কোতোয়ালী থানাধীন বাগবাড়ি এলাকার সোমলাল দাসের ছেলে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামীদের গাজীপুর হতে সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় এনে মামলার ঘটনার বিষয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা মামলার ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করে। তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করার আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
উল্ল্যেখ্য গত ১৫ এপ্রিল রাতে শাহী ঈদগাহ দলদলি চা বাগান এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পারভেজ, জাবেদ, রানাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জন লাঠিসোটা ও ছুরি দিয়ে তুষারের উপর আক্রমণ চালায়।
পরবর্তীতে উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় তিন জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার (১৯ এপ্রিল) র্যাব-৯ এর একটি দল জিন্দাবাজার এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে প্রধান আসামী পারভেজকে গ্রেফতার করে।
এর একদিন পর এসএমপি পুলিশ গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানা এলাকা হতে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ঘাতক পারভেজ (২০)কে তার সহযোগীসহ গ্রেফতার করে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) এডিসি মিডিয়া মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “একটি কুচক্রী মহল আসামিদের আড়াল করতে নির্দোষ যুবকের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আটক পারভেজকে স্বসম্মানে মুক্তি দেওয়া হবে।