সিলেটে বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম ছিল সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো. মবশ্বির আলী।
সেই সাথে সিলেটের সকল টেন্ডারে ছিল তার একক আধিপত্য। সিলেট নগরের বড় ফার্মেসিগুলোর মধ্যে একটি ফার্মেসির মালিক মবশ্বির।
৫ আগষ্ট ছাত্র- জনতা তার ফার্মেসি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে চরিত্রহীন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের স্ত্রীর পি এস হেলেনা সাথে পরকীয়া সম্পক ছিলো তার। সেই সুবাদে বড় বড় কাজ সে ভাগিয়ে নিতো। মবশ্বির আলীর পিছন ফিরে দেখা:- তার মূল বাড়ি বিশ্বনাথে, পিতা মৃত আশরাফ আলী। ৯৬ -২০০১ আওয়ামlলীগ শাসনামল। সিলেট শহরে দাপিয়ে বেড়ায় তাদের ছাত্র সংগঠনের দুর্ধর্ষ ক্যাডাররা। শহরে রাজত্ব করে বেশ কয়েকটি গ্রূপ। এরমধ্যে নাসির গ্রূপ নামে খ্যাত গ্রূপটির অবস্থান নগরীর তেলি হাওর এলাকায়। এই গ্রূপেরই সদস্য ছিল ছাত্রলীগ ক্যাডার মবশ্বির আলী।
নাসির গ্রুপের হয়ে সন্ত্রাসী করে দিনে দিনে সে দুর্ধর্ষ অপরাধীর দিকে ধাবিত হয়। তার মূল পেশা ছিল ছিনতাই। শহরজুড়ে ভয়ংকর ছিনতাই নেটওয়ার্ক তৈরী করে সে। তখন এই সিলেট শহরের আতংক হয়ে উঠে পাঠা মবশ্বির।
বিশেষ করে এয়ারপোর্ট রোডে বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম ছিল পাঠা মবশ্বির। শরীর গায়ে গতরে বিশালদেহী হওয়ায় তাকে সবাই পাঠা মবশ্বির বলে ডাকতো বিমানবন্দর সড়কে যাত্রীদের লাগেজ, ব্যাগ ছিনতাই হত সব ছিনতাইয়ে ছিল মবশ্বিরের হাত।
শুধু ছিনতাই নয়, তার নেতৃত্বে একটি আন্তঃজেলা ডাকাতদল তৈরী হয় সিলেট নগরীতে।
১৯৯৮ সালে সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ রোডের নির্জন পারাইরচক ৩০টির মতো ডাকাতি সংঘটিত হয়েছিল, সে সময়ের আন্তঃজেলা ডাকাতদলের নেতা মবশ্বির এই ডাকাতিতে নেতৃত্ব দিয়ে পুরো সিলেটে আলোচিত হয়।
২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পরাজয় হলে ক্ষমতায় আসে বিএনপি- জামায়াত জোট সরকার। সময় সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় মবশ্বির
এরপর ২০০৮ সালে আবার লীগ ক্ষমতায় আসলে ছিনতাইকারী মোবাশ্বিররা যেন হাতে আসমান পায়। তার নেতৃত্বে নগরীতে শুরু হয় দখলের মহোৎসব। চৌহাট্টা সদর হাসপাতালের জায়গায় জোর করে ন্যায্যমূল্যের ফার্মেসী বানিয়ে ফেলা হয়।
লীজের নাম করে শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিনামূল্যের নামকাওয়াস্তে ভাড়ায় এই ফার্মেসি শহরের অন্যান্য ফার্মেসী ব্যবসার স্বাভাবিক ব্যবসা বিনষ্ট করে। সদর হাসপাতাল ও ওসমানী হাসপাতালের বিনামূল্যের ঔষধ মেডিকেল সরঞ্জামাদি এই ফার্মেসিতে রাখা হতো।
এবং সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার ভয় দেখিয়ে তার ফার্মেসীতে রোগীদের ঔষদ কেনার জন্য বাধ্য করত।
২০২৪ সালে লন্ডন থেকে উড়ে এসে বিনা ভোটে মেয়র হলেন পলাতক আনোয়ারুজ্জামান। কদিন আনোয়ারের নির্বাচনে খেটে মবশ্বির আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে সর্বত্র তার হুমকি ধামকি ভয়ভীতি চাঁদাবাজি চলতে থাকে।
সিটির কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে এমন ভাষায় কথা বলতেন তিনি মনে হতো তিনি নিজে সিটির মেয়র। টাকার বিনিময়ে টেন্ডার দালালি, টাকার বিনিময়ে মানুষের কাজকর্ম নিয়ে সিটি কর্তাদের চাপ দিতেন আনোয়ারের প্রভাব খাটিয়েl আনোয়ারুজ্জামানের সাথে ঘনিষ্টতার কারণে নগরজুড়ে দখলবাজিতে নানেন তিনি।
সবচেয়ে আলোচিত হয় আস্ত একটি ক্লিনিক দখল ও নগরীর খরাদী পাড়ায় এক বিধবার জায়গা দখল করে। মবশ্বির আনোয়ারুজ্জামানের ইশারায় নগরীর নবাব রোডের নিরাময় ক্লিনিকটি দখল করে ফেলেন সুকৌশলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় , নিরাময় ক্লিনিকের জায়গা ও ভবনের মূল মালিক আব্দুল্লাহ আসাদ আল হাফিজ। তিনি সিলেটের সনামধন্য ডাক্তার খালিক সাহেবকে
২০০৭ সাল পর্যন্ত এটি ভাড়া দেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পর হঠাৎ লোকবল নিয়ে এটি দখল করে মবশ্বির ও তার বাহিনী। কোন সময় ভাড়া দিতো। বেশিরভাগ মাসেই ভাড়া দিতো না। এ নিয়ে প্রয়াত হাফিজ সাহেবের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি উচ্ছেদ মামলা করা
২০১৯ সালে সে উচ্ছেদ মামলায় ক্যাডার মবশ্বিরকে ৫ নং আসামি করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ৫ আগস্ট এর আগেই মবশ্বির পালিয়ে যায়। নিরাময় ক্লিনিকের ভূমি মালিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ক্যাডার মবশ্বির আমাদের জায়গা ও ভবন প্রভাব খাটিয়ে দখল করে রেখেছে। তার হুমকি ধামকিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছি। আমাদের মামলা চলমান আছে। আশা করি আদালতের ন্যায্য বিচার আমরা পাবো।
জুলাই আগস্টে সিলেটের নিরীহ ছাত্রজনতার উপর অত্যাধুনিক বন্দুক দিয়ে গুলি চালায় মবশ্বির। এই সময়টায় কসাইয়ের ভূমিকায় নামে মবশ্বির। তার বাহিনীকে ছাত্র জনতার উপর লেলিয়ে দেয়।