সিলেট সিটি কর্পোরেশনে এমএলএসএস পদে কর্মরত উত্তর বালুচর, জোনাকী ৩৪, আল ইসলাহ নিবাসী মৃত মনু মিয়ার ছেলে হেলাল আহমদ রুবেল ও একই অফিসের জন্ম নিবন্ধন শাখায় কর্মরত ফাহিমা আক্তারের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য নিয়ে তৈরী হয়েছে ধ্রমজাল।
কেউ বলছেন দোষ ফহিমার আবার কেউ কেউ বলছেন রুবেলের। আবার অনেকে বলছেন দুইজনই অপরাধী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রুবেল দীর্ঘদিন থেকে সুদের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি চড়া সুদে সিসিক ভবনের বিভিন্ন কর্মচারীদের টাকা দিয়ে থাকেন। টাকা দেয়ার সময় তিনি ষ্ট্যাম্প ও টাকা গ্রহিতার নামীয় বা অন্য কেউ জিম্মায় থাকলে তার কাছ থেকে খালি চেকের পাতা নেন।
সময়মত টাকা পরিশোধে ব্যার্থ হলে তাকে দেয়া চেকের পাতা ও লিখিত ষ্ট্যাম্প দিয়ে মামলার ভয় দেখান।
যেহেতু সরকারি চাকুরিজীবি সেহেতু অনেকেই তার হুমকির কারনে তটস্হ থাকেন। তেমনই এক ঘটনার জন্ম দেন রুবেল ও ফাহিমা। জানা যায়, রুবেল সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্ম নিবন্ধন শাখায় কর্মরত ফাহিমা আক্তারকে চার লক্ষ আশি হাজার টাকা সুদে দেন।
কথা ছিল ফাহিমা প্রতি মাসে রুবেলকে ৫০ হাজার টাকা হারে ১২ টি কিস্তি দিয়ে পরিশোধ করবেন। কিন্তি রুবেলের দাবী ফাহিমা তার টাকা এখনও পরিশোধ করেন নাই। অপর দিকে ফাহিমার দাবী তিনি রুবেলের পাওনা সমস্হ টাকা পরিশোধ করেছেন। টাকা পরিশোদের পর রুবেল অতিরুক্ত টাকা দাবী করছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকজন কর্মচারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফাহিমা রুবেলের কিস্তি পরিশোধ না করে শুরু করেন টালবাহানা।
তিনি কিস্তির জন্য রুবেলের কাছ থেকে সময়ও নেন। কিন্তু সময় পার হয়ে গেলেও কিস্তি দিতে না পারায় রুবেল ফাহিমাকে হুমকি দেয়া শুরু করেন। তারা আরো জানান, ফাহিমা এরখম অনেকের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করেন নাই। পরবর্তীতে খুজতে গেলে সময় নেন।
তিনি নারী হিসেবে কেউ ভয়ে কিছু বলেনা। এদিকে সিসিক সুত্রে জানা গেছে ফাহিমাকে এর আগেও একবার অফিসের অনিয়মের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিলেন।
উল্ল্যেখ্য ফাহিমার প্রথম বিয়ে ডিভোর্স এর পর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি আমেরিকা প্রবাসী জনৈক লোকের সাথে ২য় বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ফাহিমা জানান, এই ঘটনার পর থেকে রুবেল আরও বেশি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। অন্যথায় ফাহিমার ২য় স্বামীকে বিভিন্ন অপপ্রচারসহ মিথ্যা কালিমা লেপন করে নতুন সংসার ভেঙ্গে দিবে বলে হুমকি প্রদান করে।
এদিকে বিবাহ পরবর্তী ছুটি কাটিয়ে ফাহিমা কর্মস্থলে যোগ দিতে অফিসে যান। খবর পেয়ে রুবেল ফাহিমাকে ডেকে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ৫ম তলায় নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে ফাহিমার হাতে থাকা স্যামসাং গ্যালাক্সী এ-১৫ মোবাইল ফোন ও সাথে ভ্যানেটি ব্যাগে থাকা নগদ পয়ত্রিশ হাজার (৩৫,০০০/-) টাকাসহ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একই সাথে এই ঘটনা জানাজানি করলে ফাহিমাকে অফিসে আসতে দেবে না এবং প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে।
এ ঘটনায় ফাহিমা গত ৬ মার্চ কোতয়ালী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্ল্যেখ করেন, রুবেলের সাথে দীর্ঘদিনের জানাশোনা রয়েছে।
সেই সুবাদে ফাহিমা আক্তার দুই বছর আগে পারিবারিক কারণে চেক মাধ্যমে সুদ ব্যবসায়ী হেলাল আহমদ রুবেলের কাছ থেকে চার লক্ষ আশি হাজার (৪,৮০,০০০/-) টাকা গ্রহণ করেন।
লাভের শর্ত অনুযায়ী প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার (৫০,০০০) টাকা হিসাবে পরিশোধের মাধ্যমে সুদসহ আসল টাকা পরিশোধ হইবে। সেই শর্ত মোতাবেক প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার (৫০,০০০) টাকা হিসাবে ১২টি কিস্তি প্রদান করবেন।
ফাহিমা আক্তার অভিযোগে আরো উল্ল্যেখ করেন, তিনি ১২ টি কিস্তি পরিশোধ করার পর রুবেলকে দেয়া তার নামীয় চেক এর পাতা ফেরত চাইতে গেলে রুবেল তাতে অপারগতা প্রকাশ করে।
এমনকি তার চাহিদা অনুযায়ী আরও দুই লক্ষ (২,০০,০০০/-) টাকা প্রদান না করলে সে মিথ্যা অপবাদ ও গুজব ছড়িয়ে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ফাহিমাকে হেয় করবে বলে হুমকি প্রদান করেন।
অভিযোগে ফাহিমা উল্লেখ করে, ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন থেকে রুবেল আত্মীয়স্বজনদের বিভিন্ন অপবাদ, হুমকি এবং চাঁদা দাবি করে আসতেছে।
যেহেতু এই মোবাইল নম্বরটি দেশে-বিদেশে এবং অফিসে সকলের কাছে পরিচিত। সেই হিসাবে নম্বর পূজি করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে সে চাঁদা আদায় করে আসছে বলে ফাহিমা উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই তারেক আজিজ অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়া হবে।