বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন

সিলেটে যুবলীগ নেতা হিরোইন সাহান এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে : এলাকায় আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৬৪১ বার পড়া হয়েছে

সিলেটের হিরোইখোর খ্যাত যুবলীগের সন্ত্রাসী শাহরিয়ার খান সাহান এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সাহান গা ঢাকা দিলেও এলাকায় রয়ে গেছে তার সন্ত্রাসী বাহিনী যাদের নিয়ে উপশহর, তেররতন, সাদাটিকর, মেন্দিবাগের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ভয় আর আতঙ্ক এসব এলাকায় থামছেনা চুরি,ছিনতাই ও মাদক ব্যবসা।

সাহান চক্র মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে এলাকায় হুমকি ধামকিতো আছেই।

জানা যায়,  গত জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাহান প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্হানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।

বিশেষ করে উপশহর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ পয়েন্ট, চালিবন্দর ছিল তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে। সেই সাথে হামলার জন্য প্রতিদিন সে তার কলোনী থেকে লোকজন নিয়ে যেত। কে এই সাহান:- এক সময়ের মেন্দিবাগ সংলগ্ন চতুর্দিকে পানির মাঝখানে ছিল একটি টিলা। যেটাকে টিলাবাড়ি  হিসেবে ডাকা হত।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ যখন পরো দুবড়ির হাওর (বর্তমান উপশহর) জরীপ করে জমি অধিগ্রহন করে তখন এই টিলায় কোন বাড়ি ছিলনা।

পরবর্তীতে যখন উপশহর মাটি ভরাট করা শুরু হয় তখন সাহানের বাবা চালাকি করে সেখানে একটি বাড়ি তৈরী করে। যাতে সরকারিভাবে ফায়দা নিতে পারেন।

বর্তমানে সেখনে মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি কলোনী রয়েছে। সেই টিলাবাড়ির (বর্তমানে শাহপরান থানাধীন বাসা নং ৬০, রোড নাম্বার ৩৯, ব্লক সি, পশ্চিম তেররতন উপশহর) এলাকার মৃত ময়না মিয়ার ছেলে শাহারিয়ার খান সাহান উরফে হিরোইন খোর সাহান।

সাহানের চুরি বিদ্যার হাতে খড়ি:- ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে উপশহর আবাসিক এলাকা পরিপুর্ণ হওয়ার আগ থেকে সাহান এলাকায় করত হাত সাফাইয়ের কাজ।

ছাগল, মুরগী, রড, ইলেক্ট্রিকের তামার তার এগুলোই চুরি করে বিক্রি ছিল তার রোজকার আয়ের পথ। ৯০ পরবর্তী সময়ে সে হয়ে উঠে এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী।

৯৮ সালের দিকে শুরু হয় তার নেশার জগৎ। প্রতিদিন উপশহর এলাকার নির্মানাধীন ভবনে চৌকিদারদের হুমকি ধামকি দিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে সেবন করত হিরোইন। যার কারনে তার নামের শেষে যোগ হয় হিরোইন সাহান। রাজনীতিতে অভিষেক:- ২০০১ পরবর্তী সময়ে সে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে। দীর্ঘদিন বিএনপির কর্মী হিসেবে ছিল। যখন আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসল তখন চতুর সাহান তার খোলস পাল্টাতে থাকে।

সে খোলস পাল্টিয়ে হয়ে যায় যবলীগ ক্যাডার। তাকে যুবলীগের ক্যাডার হিসেবে তৈরী করেন সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার। এরপরে আর সাহানকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি হয়ে উঠেন পশ্চিম তেররতন উপশহর এলাকার ত্রাস।

২০২৪ সালের ৪ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীর ছোড়া গুলিতে আন্দোলনকারীসহ সাধারণ মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় একদল অস্ত্রধারী। এদের মধ্য এই সাহানও ছিলেন।  বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতাকে হঠাতে ভয়ংকর অস্ত্র হাতে নিয়ে সিলেটের শীর্ষ অস্ত্রধারীদের সাথে এই সাহানের অগ্রনী ভুমিকা ছিল।

সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, যুবলীগ ক্যাডার মুরাদ হোসেনসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য ক্যাডারদের সঙ্গে সাহানের ছবি ইতিমধ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। হিরোইনখোর সাহান ছিলেন যুবলীগ নেতার ভূমিকায়, মুশফিক জায়গিরদার, আলম খান মুক্তি, মুরাদের ছায়াতলে থেকে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছন তিনি।

তিনি নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজের জায়গার উপর যুবলীগের অফিস করে দেন। তাছাড়া বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অর্থ দিয়ে আলম খান মুক্তি মুশফিক জায়গিরদার কে সহযোগিতা করতেন।

ছাত্র-জনতার উপর হামলার কয়েকটি মামলার পলাতক আসামিও সাহান। তবুও কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণে রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সিলেটের ছাত্রলীগ ক্যাডারদের আস্থাভাজন ঘনিষ্ঠ ছিলেন সাহান। তাছাড়া সিলেট নগরে রয়েছে টোকাইদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তার ভয়ে তটস্থ ছিলেন সিলেট নগরীর পশ্চিম তেররতন এলাকার মানুষ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে,কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী অনেককে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্রের জোগানদাতা সম্পর্কে জানা হচ্ছে।

বাকিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে সরকার পতনের পরপরই এদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে। প্রযুক্তি ও সোর্সের মাধ্যমে জড়িতদের অবস্থান শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সুত্র জানায়, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সে গা ঢাকা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, যারা অপরাধীর তালিকা আছে তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান প্রক্রিয়া চলমান আছে। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020-2025 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!