প্রথম সকাল ডেস্ক:- মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এই মাসে হাজার হাজার উত্তর কোরিয়ান সেনা প্রশিক্ষণের জন্য রাশিয়ায় পৌঁছেছে। তাদেরকে ইউক্রেনের রণাঙ্গণে মস্কো শিবিরকে শক্তিশালী করতে মোতায়েন করা হবে। খবর সিনএননের।
পশ্চিমাবিরোধী দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সর্ম্পক উন্নয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য জরুরি নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে। পশ্চিমাবিরোধী দেশগুলোর পারস্পরিক অংশীদারিত্ব সামরিক সম্পর্কে পরিণত হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য এক জরুরি সর্তকর্বাতা।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া শত শত ইরানি ড্রোন ব্যবহার করেছিল। গত মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, তেহরান রাশিয়াকে স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও পাঠিয়েছে।
এদিকে, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম দিয়ে রাশিয়ার যুদ্ধ শক্তিশালী করার অভিযোগে চীনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো দুটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ অস্ত্র ব্যবস্থা (কমপ্লিট উইপন সিস্টেম) সরবরাহের জন্য জরিমানা করেছে।
তবে তিনটি দেশই এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, তারা এই ধরনের সমর্থন দিচ্ছে না।
এই সহযোগিতার সম্পর্কের উত্থান মূল্যায়ন করে, মার্কিন প্রতিরক্ষা কৌশল মূল্যায়নকারী কংগ্রেস সমর্থিত একটি গোষ্ঠী রাশিয়া, চীন, ইরান এবং উত্তর কোরিয়াকে ‘উদীয়মান ক্ষতিকারক অক্ষ’ বলে অভিহিত করেছে।
ভয়টি হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি যৌথ শত্রুতা ক্রমবর্ধমানভাবে এই দেশগুলিকে একসঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করছে। কেবল একটি অঞ্চলে নয়, বিশ্বের একাধিক অংশে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য পশ্চিমা-বিরোধী দেশগুলোর হুমকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ান সেনা পৌঁছানো নিশ্চিত করে বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, যদি উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাহলে তা খুবই গুরুতর ব্যাপার। এর প্রভাব শুধু ইউরোপেই সীমাবদ্ধ থাকবে না ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলেও ছড়িয়ে যাবে।
রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ান সেনা মোতায়েনের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যের পর, দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের কথা বিবেচনা করতে পারে। যেখানে মার্কিন কোনো মিত্র এখনও সরাসরি অস্ত্র সরবরাহ করতে পারেনি।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষতা দাবি করেছেন এবং মূলত চীনা সংস্থাগুলিকে সরাসরি প্রাণঘাতী সহায়তা সরবরাহ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই চারটি দেশ একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করার উৎসাহ রয়েছে। আপাতত তাদের পারস্পরিক বিশ্বাস ও একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
চীন বারবার জোর দিয়ে বলেছে, রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ‘জোট-নিরপেক্ষ, দ্বন্দ্বহীন এবং কোনো তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্যবস্তু নয়’।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ন্যাটো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের একটি বৈঠকে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়া যোগ দিয়েছে।
কিছু বিশ্লেষক মূল্যায়ন করেন, বর্তমান গতিশীলতা ভবিষ্যতের দ্বন্দ্বগুলির ঝুঁকিও বাড়াবে- যার একটিতে রাশিয়া নয়, বরং চীন রয়েছে কেন্দ্রে।
উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ চীন সাগর বা তাইওয়ান নিয়ে সম্ভাব্য সংঘাতের ক্ষেত্রে, চীন উত্তর কোরিয়া বা রাশিয়াকে উত্তর এশিয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে দেখতে চায় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞ এই ‘অক্ষ’ বা এই ধরনের ভবিষ্যতকে একটি প্রত্যাশিত ফলাফল হিসেবে দেখাকে সতর্ক করেছেন। কারণ এই সম্পর্কগুলি গভীর আদর্শিক সম্পর্ক নয়, বরং স্বার্থবাদী সম্পর্ক।