নিজস্ব প্রতিবেদক:- কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা সিলেট সীমান্তের চোরাচালান ব্যবসা। প্রতিদিনই আসছে ভারতীয় মোবাইল সেট, জিরা, চিনি, কাপড়, নাসির বিড়ি, গাড়ির টায়ার, হাতঘড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, সিএনজি গাড়ির টায়ার-টিউব, ফেনসিডিল, গাঁজা, খাবার পণ্য, মদসহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য।
২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর দেদারছে ঢুকছে এসব ভরতীয় অবৈধ পণ্য। পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভারতীয় পণ্য জব্দ করলেও চোরাচালানের মুল গডফাদারদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা যায়। প্রতিদিন সীমান্তে অবৈধ পণ্য আমদানি রপ্তানি চলছেই। আর ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে সীমান্তের চোরাকারবারিরা।
চোরাচালান রোধ নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হয়। প্রতিটি বৈঠকে জোর গলায় বক্তব্য আসে চোরাচালান দমনে আরও কঠোর হতে হবে। নজরদারি বাড়াতে হবে, তালিকা ধরে এ্যাকশনে যেতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ ধরনের বক্তব্য চোরাচালান সংক্রান্ত বৈঠকের কমন ডায়লগে পরিণত হয়েছে। কিন্তু চরম অপ্রিয় সত্য হচ্ছে, এহেন ডায়লগে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। চোরাচালান থামানো যাচ্ছে না। আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়েছে চোরাচালানিরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ইতিমধ্যে সিলেট সীমান্তে চোরাকারবারিদের নাম বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় নীরব রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের আগে খোদ পুলিশের কর্তাব্যাক্তিরা এসব চোরাচালান থেকে চাঁদা নিতেন। পট পরিবর্তনের পর ভাবা হয়েছিল এবার হয়ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্হান নেবেন। কিন্তু যেই কদু সে লাউ! কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না প্রতিদিনই চলছে চোরা কারবারিদের আমদানি রপ্তানি।
চোরাচালান রোধে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাজ করার কথা থাকলেও এখনও চোরাচালানিদের আটকে তাদের কোন ভুমিকা চোখে পড়নি। নিয়মিত পুলিশ চেক পোষ্ট ও সীমান্তে বিজিবির হাতে চোরাই পন্য আটক হলেও তার দ্বীগুন সীমান্ত দিয়ে সিলেট শহরে ঢুকছে। একটি সুত্র বলছে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার পণ্য সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে।
মাঝে মধ্যে ভারতীয় এসব চোরাই পণ্য লুটপাটের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। ভারত থেকে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত হয়ে চোরাইপণ্য সিলেট শহরে ঢুকার মুখে তা লুট করে নিচ্ছে একদল সন্ত্রাসীরা। যার ফলে লুটপাটকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তাতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টনক নড়ছে না।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চোরা চালিনিদের গ্রেফতার না করায় চেরাচালানে জড়িতরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের চোরাচালানের কাজ।
তবে এ পর্যন্ত চোরাচালেনের পণ্যসহ যে বা যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এরা সবাই ভারতীয় অবৈধ পণ্য বহনকারি গাড়ির ড্রাইভার অথবা হেলপার। চোরাচালানের মুল হোতাদের এখনও গ্রেফতার করা যায়নি, যার ফলে চোরাচালান বন্ধে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খেতে হচ্ছে নাকানি চুবানি।
২০২৪ সালের ৪ আগষ্টের পুর্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা ছিল চোরাচালানের সাথে জড়িত। এসব নেতাদের ম্যানাজ করে চোরাকারবারিরা ভারতীয় অবৈধ পণ্য পাচার করত।
এখন এসব কাজে জড়িয়ে পড়েছেন তথাকথিত কয়েকজন যুবদল ও ছাত্রদল নেতা। তাদের সাথে রয়েছেন কথিত কিছু সাংবাদিক। জানা যায়, এসব সাংবাদিক তাদের পরিচয় দিয়ে গভীর রাত অবধি মটর সাইকেল ও কার নিয়ে চোরাকারবারিদের পাহারা দিয়ে গম্তব্যে পৌছে দিচ্ছেন। আবার তাদের চাদার টাকা ঠিকমত না দিলে চোরাইপণ্য লুটও করানো হচ্ছে।
কথিত এসব সাংবাদিক ও বিএনপির সাইনবোর্ড ব্যবহারকারি চোরাকারবারিদের ধরতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার আহবান জানান সচেতন নাগরিকবৃন্দ। তারা বলেন, বৈঠকে বসে সস্তা ডায়লগ না দিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে।
সীমান্তে কড়া পাহারা থাকলে ভারতীয় পণ্য এভাবে আসত না। চোরাচালান রোধে সীমান্তে আরো কঠোর হওয়ারও পরামর্শ দেন সচেতন নাগরিকরা। সেই সাথে চোরাচালিনিদের তালিকা করে তাদের আইনের আওতায় আনারও পরামর্শ দেন।