প্রথম সকাল ডেস্ক:- কানাইঘাটে শিশু মুনতাহা খুনের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়েও হলো না। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মুনতাহাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে লাশ পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করলেও কেন এই হত্যাকাণ্ড সেটি নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত মার্জিয়াসহ অপর তিন আসামি। এ কারণে পুলিশ ধারণা করছে হত্যাকাণ্ডের গভীরে কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে।
মুনতাহা হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আলিফজান বিবি, তার মেয়ে শামীমা বেগম মার্জিয়া, প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগমকে সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. আবু জাহের বাদলের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কানাইঘাট থানার এসআই শামসুল আরেফিন।
আদালত শুনানি শেষে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো চূড়ান্ত বক্তব্য আসামিদের মুখ থেকে মেলেনি। যার জন্য এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের বাইরে আরও কেউ সম্পৃক্ত রয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে সব তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে, এই ধারণা থেকে তাদের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন খুনের মোটিভটা কী এবং এটার সঙ্গে কারা কারা জড়িত সেটা উদ্ঘাটনের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খুনের ঘটনা স্বীকার করলেও আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করতে অস্বীকার করে। এ কারণে তাদের ফের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে মুনতাহা হত্যা নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্যের। বর্তমানে মুনতাহা হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আলিফজান বিবি, তার মেয়ে শামীমা বেগম মার্জিয়া, প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগম কানাইঘাট থানায় রিমান্ডে রয়েছেন।
মার্জিয়ার মা ও নানী এলাকায় ভিক্ষা করলেও মার্জিয়ার ছিল তিনটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। তার কাছে নামে-বেনামে সিম ছিল বেশ কয়েকটি। এ কারণে তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া মার্জিয়া উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতো।
সে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতো বলে জানিয়ে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতো। ফিরতো রাতে। কখনো কখনো গাড়িযোগে লোকজন এসে তাকে নামিয়ে দিয়ে যেতো। চালচলনেও ছিল উচ্ছৃঙ্খল ভাব। এ কারণে তার সঙ্গে আশপাশের বাড়ির মহিলারা সম্পর্ক রাখতো না। ঘটনার দিনও চারখাই বাজারে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা কাটায় মার্জিয়া।
তবে গ্রেপ্তার হওয়া ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগম প্রায় সময় তাদের ঘরে আসা-যাওয়া করতো বলে জানান তারা। পুলিশ জানিয়েছে; গ্রেপ্তার হওয়ার পর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে মার্জিয়া ও তার মা আলিফজান খুনের ঘটনা স্বীকার করলেও কারণ সম্পর্কে পূর্ব বিরোধ বলেছে। একই বাড়ির বাসিন্দা হওয়ায় তুচ্ছ বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল বলে জানায় মার্জিয়া ও আলিফজান।
উল্ল্যেখ্য, কানাইঘাটের বীরদল গ্রামের শামীম আহমদের ৬ বছরের শিশুকন্যা মুনতাহা আক্তার জেরিন। ৩রা নভেম্বর বাড়ির উঠোনে শিশুদের সঙ্গে খেলা করছিল। এ সময় হঠাৎ করে সে নিখোঁজ হয়ে যায়। কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে।
এই অবস্থায় গত শনিবার রাতে পুলিশ সন্দেহজনক হিসেবে একই বাড়ির পার্শ্ববর্তী ঘরের বাসিন্দা মার্জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায়। এতে ভড়কে যান মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবি। তিনি রোববার ভোররাতে সবার অগোচরে খালে পুঁতে রাখা মুনতাহার লাশটি সরাতে গেলে জনতার হাতে ধরা পড়েন। পুলিশ গিয়ে আলিফজানকে আটক করে। ৭ দিন মাটির নিচে থাকা শিশুটির লাশ অর্ধগলিত হয়ে গিয়েছিল।
ঘটনার দিন গ্রেপ্তার হওয়া আলিফজান ও তার মেয়ে মার্জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিলেটের এডিশনাল এসপি (ক্রাইম) মো. রফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নিখোঁজ হওয়ার দিনই মুনতাহাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে খুন করা হয়। এরপর লাশ পুঁতে রাখা হয় ঘরের পাশের খালে। সেখান থেকে লাশ সরানোর সময় মার্জিয়ার মা
আলিফজানকে আটক করা হয়। বিকালে মার্জিয়ার স্বীকারোক্তি মতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত একই গ্রামের ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে আসামিদের জামিন মঞ্জুরের পর কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. জামসেদ আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লাশ সরানোর সময় হাতেনাতে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গুম হওয়া লাশ এক স্থান থেকে অন্যস্থানে হস্তান্তরের সময় পুলিশ জনগণের সহযোগিতায় প্রধান আসামি আলিফজানকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।