গোয়াইঘাট প্রতিনিধি:- সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু- পাথরবাহী ট্রাক থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নাম ভাঙিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
প্রতিদিন ট্রাক শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। জাফলং-তামাবিল ও সিলেটগামী চলাচলকারী ট্রাক, ট্রাক্টর থেকে দিনে-দুপুরে এই চাঁদাবাজি চলছে।
চাঁদা দিতে রাজি না হলে গাড়িতে থাকা শ্রমিকদের লাঞ্ছিত এবং মারধর করে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। ফলে ক্ষতিগ্রস্তসহ নিরাপদভাবে বালু-পাথর পরিবহনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
এদিকে বালুবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় বন্ধের দাবি জানিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন মালবাহী ট্রাক শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের নেতারা।
নির্যাতিতরা জানান, বালুবাহী ট্রাক জাফলং সড়কে এসে পৌঁছলে একটি চক্র বিআইডব্লিউটিএ’র নামে প্রতি ট্রাক থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করছে। চাঁদা না দেওয়ায় ট্রাক শ্রমিক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসামপাড়া গ্রামের ইয়াকুব খানের ছেলে মোঃ নাছির খান, সুনামগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার “বাউরবাগ (বাংলাবাজার) হতে রাণীগঞ্জ গ্রাম পর্যন্ত ডকিনদী, গোয়াইন নদী ও চেংগেরখাল নদীর উভয় তীরে উঠানামাকৃত মালামালের শুল্ক ও নৌ-যান সমূহের বার্নিং চার্জ আদায় কেন্দ্র” ঘাট/পয়েন্টটির ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ৩১-০১-২০২৫ তারিখ হতে ৩০-০৬-২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ১৫১ দিনের জন্য ইজারার নেন।
সুনামগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার “বাউরবাগ (বাংলাবাজার) হতে রাণীগঞ্জ গ্রাম পর্যন্ত ডকিনদী, গোয়াইন নদী ও চেংগেরখাল নদীর উভয় তীরে উঠানামাকৃত মালামালের শুল্ক ও নৌ-যান সমূহের বার্দিং চার্জ আদায় কেন্দ্র” ঘাট/পয়েন্টটির ২০২৪- ২০২৫ অর্থবছরের ৩১-০১-২০২৫ তারিখ হতে ৩০-০৬-২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ১৫১ দিনের জন্য জন্য ইজারার নিমিত্ত গত ২৭/০১/২০২৫ খ্রিঃ তারিখে অনুষ্ঠিত ১১তম দফা কর্তৃক গৃহীত হয়।
কর্তৃপক্ষের ইজারা প্রদান পদ্ধতি অনুযায়ী আপনি দরপত্রের সাথে বিধি মোতাবেক ইজারামূল্যের উপর ৫০% আর্নেষ্টমানি ১৫.৭৫,০০০/- টাকা, ১০% আয়কর ৩,১৫,০০০/- টাকা ও ১৫% মূসক ৪,৭২,৫০০/- টাকা জমা প্রদান করেছেন। কর্তৃপক্ষের ইজারা প্রদান পদ্ধতির অনুচ্ছেদ
২৭ (ক) অনুযায়ী এককালীন পরিশোধযোগ্য অবশিষ্ট ৫০% ইজারামূল্য অত্র পত্র প্রাপ্তির ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিনের মধ্যে ২৫% আনেইমানি সরকার অনুমোদিত তফসিলি ব্যাংকের পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুকূলে জমা প্রদান এবং বাকী ২৫% আনেষ্টমানি পরবর্তী ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিনের মধ্যে সরকার অনুমোদিত তফসিলি ব্যাংকের পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুকূলে জমা প্রদান পূর্বক উপযুক্ত মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নমুনা অনুযায়ী চুক্তিনামা সম্পাদন পূর্বক কার্যাদেশ গ্রহণ করার জন্য এতদ্বারা আপনাকে বলা হয়।
উল্লেখ্য, এককালীন পরিশোধযোগ্য অবশিষ্ট ৫০% ইজারা মূল্য অত্র পত্র প্রাপ্তির ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে পরিশোধ ও চুক্তিনামা দলিল সম্পাদনে ব্যর্থ হলে ইজারা প্রদান পদ্ধতির ২৭(ক) ও ২৯(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপনার কর্তৃক ইতোপূর্বে জমাকৃত সমুদয় অর্থ কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
এ বিষয়ে কোন প্রকার ওজর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না এবং কর্তৃপক্ষের ইজারা প্রদান পদ্ধতি অনুযায়ী পুনরায় টেন্ডারের মাধ্যমে ঘাট/পয়েন্টটি ইজারা প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
ইজারাদারের জন্য প্রতিপালনীয় শর্তাবলীঃ-(১) নৌ-যান হতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত অন্ধের হার অনুযায়ী শুল্ক আদায় করতে হবে; অধিক শুদ্ধ নেয়া অথবা চাঁদাবাজি করা যাবে না;(২) নৌ-যানের স্টাফদের সাথে হয়রানীমূলক আচরণ করা যাবে না;(৩) অন্য কোন সংস্থার ইজারাদারদের সাথে সংঘাতে জড়ানো যাবে না।
(৪) ইজারার শর্তাবলী ভঙ্গ করা হলে তাৎক্ষণিক ভাবে ইজারা সম্মাতিপত্র/কার্যাদেশ বাতিল করা হবে।(৫) চলন্ত অবস্থায় নৌ-যান হতে শুল্ক আদায় করা যাবে না, নদীর পাড়ে নির্দিষ্ট জায়গায় শুল্ক আদায় করতে হবে।
(৬) ঘাট/পয়েন্ট ইজারার ক্ষেত্রে প্রচলিত অন্যান্য শর্তাবলী আরোপযোগ্য হবে।সীমানাঃ সিলেট জেলার, গোয়াইনঘাট উপজেলার বাউরবাগ (বাংলাবাজার) হতে রাণীগঞ্জ গ্রাম পর্যন্ত ডকিনদী, গোয়াইন-পিয়াইন।
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার “বাউরবাগ (বাংলাবাজার) হতে রাণীগঞ্জ গ্রাম পর্যন্ত ডকিনদী, গোয়াইন নদী ও চেংগেরখাল নদীর উভয় তীরে উঠানামাকৃত মালামালের শুল্ক ও নৌ-যান সমূহের বার্দিং চার্জ আদায় কেন্দ্রের ইজারাদার মোঃ নাছির খানকে জাফলং সড়কের ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন বিআইডব্লিউটিএ তাকে চাঁদা আদায়ে অনুমতি দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ সিলেট অঞ্চলের উপ পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার “বাউরবাগ (বাংলাবাজার) হতে রাণীগঞ্জ গ্রাম পর্যন্ত ডকিনদী, গোয়াইন নদী ও চেংগেরখাল নদীর উভয় তীরের পরিবর্তে অন্য কোথাও কেউ বিআইডব্লিউটিএ এর নামে টাকা উঠালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিন। তিনি জানান কয়লা বাড়ি নামে কোন প্রতিষ্টানের সাথে আমার সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভুমি) সাইদুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও অবৈধ চাঁদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী বলেন, ইজারা শর্ত ভঙ্গ করে চাঁদা আদায় করলে ইজারাদারের ইজরারা বাতিলের সুপারিশ করা হবে।