রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

খুনের পাল্লাা ভারি ছিল রণজিতের : খুনির সংখ্যা বেশি ছিল আজাদের

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১২৪৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধি:- সিলেটের ‘কিলিং জোন’ হিসেবে পরিচিত টিলাগড় এখন শান্ত। সন্ত্রাসীদের  গডফাদার, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি, মাদক ব্যবসার পার্সেন্টিস নেতা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও আ.লীগ সরকারের সাবেক এমপি এড.রনজিত সরকারহ হত্যা বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক থাকার কারনে টিলাগড়ে নেমে এসেছে শান্তি। যেখানে এলাকাবাসীর ঘুম ভাঙ্গত গুলির শব্দে সেখানে আজ সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক খুন, সংঘর্ষ আর অস্ত্রের মহড়া ছিল নিয়মিত ঘটনা। প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকত এখানকার বাসিন্দারা। টিলাগড় নগরীর আলোচিত-সমালোচিত একটি এলাকা। শতবর্ষী এমসি কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এ এলাকায় অবস্থিত। সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ ৪ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে থাকার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে টিলাগড়ের কদর বরাবরই ছিল আকাশচুম্বী। টিলাগড়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া থাকতেন সবাই।

রনজিত  আজাদ এখানকার বাসিন্দা হওয়ায় তাদেরকে কেন্দ্র করে টিলাগড়ে গড়ে ওঠে শক্তিশালী দুটি গ্রুপ৷ এই দুই নেতার প্রত্যক্ষ মদদে এখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষে রক্ত ঝরার ইতিহাস যেমন আছে, তেমনি আছে নিরীহ মানুষ খুনের ঘটনাও। পুরো সিলেট নগরীতে যে পরিমাণ অপরাধ সংঘটিত হতো তার চেয়ে বেশি হত এই টিলাগড়েই। একের পর এক হত্যা, সংঘর্ষ ও অস্ত্রের মহড়ার ঘটনায় ‘কিলিং জোন’-এ পরিণত হয়েছিল টিলাগড়। তার কারন এই টিলাগড় থেকেই কোটিপতি হয়েছেন এই দুই নেতা ও তাদের পরিবার।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভাব বিস্তার, সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চুরি, জায়গা দখলসহ নানা কারণে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে টিলাগড়ে। আর এসবে পিছনে ছিল আজাদ- রঞ্জিত গ্রুপের সন্ত্রাসীরা জড়িত। এসব অপকর্ম রোধে ছাত্র সংগঠনগুলোতে বহিষ্কার, কমিটি স্থগিতসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বরং দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল টিলাগড় কেন্দ্রীক রাজনীতি।

২০০৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টিলাগড়ে খুনের শিকার হয়েছেন- ছাত্রলীগ কর্মী তানিম খান, মেধাবী শিক্ষার্থী আকবর সুলতান, মিজান কামালী, উদয়েন্দু সিংহ পলাশ, জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম, ওমর আহমদ মিয়াদ ও ব্যবসায়ী করিম বক্স মামুন। মূলত,টিলাগড়ে খুনের রাজনীতির শুরু ২০০৩ সাল থেকে। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় খুন হন আকবর সুলতান। আকবর সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন।

এরমধ্যে খুনের পাল্লাা ভারি ছিল রণজিৎ বলয়ে, খুনির সংখ্যা বেশি ছিল আজাদ বলয়ে। খুন ছাড়াও চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, জায়গা দখল, চাঁদাবাজি, হামলা, অগ্নিসংযোগসহ অভিযোগ রয়েছে টিলাগড় কেন্দ্রিক এই দুই গ্রুপের ছাত্ররাজনীতির ক্যাডারদের বিরুদ্ধে।

পুলিশ সূত্রে ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গেল এক দশকেই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে টিলাগড় এলাকায় কমপক্ষে ৩০টির বেশি সংঘর্ষ হয়েছে। প্রতিটিতেই ছিল অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার।

একের পর এক খুন, সংঘর্ষে উদ্বিগ্ন থাকতেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এসব ঘটনায় মামলা হলেও কখনও কোন হত্যা কিংবা সংঘর্ষের বিচার হয়নি৷ যে কারণে দিন দিন অস্বস্থিকর হয়ে উঠেছিল টিলাগড়ের পরিবেশ।

এর প্রভাব পড়তো এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাসা বাড়ি সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। সংঘর্ষের সময় হামলা ও ভাংচুরের ভয়ে টিলাগড়ের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হত। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তেন ব্যবসায়ীরা। কখন কি হয় এই ভেবে স্থায়ীয়রা বরাবরই আতঙ্কের মধ্যে থাকতেন।

সন্তানদের বাসার বাইরে পাঠিয়ে চিন্তিত থাকতেন অভিভাবকরা। বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের পর এখানে থাকা এমসি কলেজ, সরকারি কলেজ সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আবাসিক হলগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হত প্রশাসন। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর বদলে যায় টিলাগড়ের পরিবেশও। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এখানকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সবাই।

টিলাগড়ের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কখন যে সংঘর্ষ বেঁধে যায় এই ভয়ে সারাক্ষণই একটা আতঙ্ক কাজ করত। এখন আর সেই ভয় কাজ করে না৷ আমরা নির্ভয়ে ব্যবসা করছি এতেই শান্তি।

দেশীয় অস্ত্র হাতে আজাদ গ্রুপ

টিলাগড়ের শাপলাবাগ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, আমরা এখন নির্ভয়ে টিলাগড় যেতে পারি, বাচ্চাদের স্কুলেও পাঠাতে পারি, নিজেরাও মাঝে মধ্যে টিলাগড় যাই প্রয়োজন।

আগে টিলাগড় যেতে দুঃচিন্তায় থাকতাম এখন সেই দুঃচিন্তা কাজ করে না৷ যারাই ক্ষমতায় থাকুক টিলাগড়ের পরিবেশ সবসময় এমনটাই থাকবে বলে প্রত্যাশা করেন তারা।

সিলেটের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, আমি শাহপরান থানায় যোগ দেয়ার আগ থেকেই টিলাগড়ের ইতিহাস জেনেছি। বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ডের কারণে একটা সময় এই এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত, এখন সেটি নেই। টিলাগড় এখন শান্ত।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020-2025 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!